হাওজা নিউজ এজেন্সি: আফগানিস্তানের সামানেহ সাদাত মুসাভি, যিনি কুরআন ও নাহজুল বালাগার হাফেজ, এ বছরের শুরুর দিকে ইরানের সানান্দাজ শহরে অনুষ্ঠিত ৪৮তম জাতীয় কুরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নাহজুল বালাগায় সকল ক্ষেত্রের জন্য, সকল মানুষের জন্য উপকারী উপদেশ ও দিকনির্দেশনা রয়েছে।
তিনি বলেন, “নাহজুল বালাগার দিকে মনোযোগ দিলে আমরা উপলব্ধি করি যে এগুলো কোনো সাধারণ ব্যক্তির কথা নয়; বরং এমন এক ব্যক্তির বাণী, যার রয়েছে আল্লাহপ্রদত্ত জ্ঞান।”
নাহজুল বালাগা হলো ইমাম আলী (আ.)-এর খুতবা, উপদেশ, প্রার্থনা, চিঠিপত্র ও বাণীর সংকলন, যা প্রায় এক হাজার বছর আগে আল-সাইয়্যিদ আল-শরীফ আল-রাযী সংকলন করেন।
জনাবা মুসাভি আরও বলেন, “আমি পুরো কুরআনের হাফেজ, এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পূর্ণ কুরআন হেফজ বিভাগে অংশ নিতাম। তবে এ বছর আমি নাহজুল বালাগা বিভাগে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমার জন্য দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল এবং আশা করি ভবিষ্যতেও অংশ নিতে পারব।”
নাহজুল বালাগা সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার বরকত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই গ্রন্থের সাথে পরিচিত হয়ে আমি উপলব্ধি করেছি যে যারা বলেন ‘নাহজুল বালাগা হলো কুরআনের ভাই’—তাদের কথা কতটা সত্য ও বাস্তব। কারণ ইমাম আলী (আ.) তাঁর বক্তব্য ও খুতবায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত সব সামাজিক বিষয়ের উপদেশ তুলে ধরেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “নাহজুল বালাগায় আমীরুল মু'মিনীন (আ.) অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও বাস্তবমুখী রাজনৈতিক নির্দেশনা দিয়েছেন—শাসনব্যবস্থা, নেতৃত্ব, প্রজাদের দোষ-গুন গোপন রাখা এবং জনসেবার প্রতি যত্নবান হওয়ার বিষয়ে।পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা, সম্পর্ক ও ঝগড়া-বিবাদ দূর করার বিষয়ে তাঁর উপদেশগুলো অত্যন্ত জীবন্ত। এসব খুতবায় তিনি জীবনের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা ও বিভেদ ও ফিতনা থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “ইমাম আলী (আ.) তাঁর বক্তব্যে মুমিনদের জন্য আধ্যাত্মিক শিক্ষা, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা এবং সাধারণ মানুষের জন্য জীবন-ব্যবস্থার উপদেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি আহলে বাইত (আ.)-এর মর্যাদা ব্যাখ্যা করেছেন, যাতে মানুষ জানতে পারে তারা কাদের ওপর নির্ভর করছেন এবং আলী ইবনে আবু তালিব (আ.)-এর প্রকৃত ব্যক্তিত্ব কী। তাই নাহজুল বালাগা পড়লে স্পষ্ট হয় যে এসব কথা সাধারণ কোনো ব্যক্তির নয়; বরং এমন এক ব্যক্তির, যিনি ছিলেন দিব্যজ্ঞান ও আল্লাহর দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী।”
নাহজুল বালাগার কোন অংশটি তাঁর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে—জিজ্ঞেস করা হলে মুসাভি বলেন যে শাকশাকিয়া খুতবা তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।
তিনি বলেন, “এই খুতবায় ইমাম (আ.) বলেন, ‘আমি এমন অবস্থায় নীরব ছিলাম, যখন চোখে ছিল কাঁটা এবং গলায় ছিল হাড়ের মতো ব্যথা, আর এই ধৈর্য আমাকে ব্যাপক কষ্ট দিয়েছিল।’ এই খুতবার পেছনের ইতিহাস জানার আগ্রহ আমার শুরু থেকেই ছিল।”
আপনার কমেন্ট